একটি মানচিত্র যেভাবে নাবিকদের সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে তাদের গন্তব্যে পোঁছাতে সাহায্য করে, হরাইজোন রিজিওনাল ক্যান্সার সেন্টারের চিকিৎসা কর্মীরা সেভাবেই রোগীদের তাদের সুস্থ জীবন ফিরে পেতে সহায়তা করে। ডাঃ নারংশাক কিয়াটিকাজর্ন্থাদা (Dr. Narongsak Kiatikajornthada) একজন হেমাটোলজিস্ট-অনকোলজিস্ট এবং হরাইজোন রিজিওনাল ক্যান্সার সেন্টারের সহ-পরিচালক, তিনি তার চিকিৎসা কর্মীদের দায়িত্ব তুলে ধরেন এবং বলেন যে,
“এখানে আসা সকল রোগীদের মধ্যেই ব্যথা এবং উদ্বেগ কাজ করে। তাদেরকে অবশ্যই অনুপ্রাণিত করতে হবে আত্মবিশ্বাসের সাথে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে যাতে করে তারা ক্যান্সারের সাথে মোকাবিলা করতে পারে। আমাদের পক্ষ থেকে সবচেয়ে মূল্যবান যে জিনিসটি আমরা তাদের জন্য করতে তা হল, তাদেরকে আমাদের সৌজন্যপূর্ণ এবং পেশাদার চিকিৎসা কর্মীদের দ্বারা সেবা প্রদান করা”।
হরাইজোন ক্যান্সার সেন্টারে যখন কোনো রোগী পাঠানো হয়, প্রতিবার এখানকার চিকিৎসকবৃন্দ তাদেরে কার্যক্রম শুরু করেন আলোচনার মাধ্যমে। সেই আলোচনায় রোগীদের অসুস্থতা, বিভিন্ন লক্ষণ বা একাধিক রোগের ব্যাপারে কথা বলা হবে। ডাঃ নারংসাক উল্লেখ করলেন যে “যখন অন্য কোনো ডিপার্টমেন্ট- যেমন লাঙ্গস, গ্যাস্ট্রো-ইন্টেস্টিনাল, হেপাটোলজি- থেকে রোগীদের আমাদের কাছে পাঠানো হয় তখন আমাদের সাথে দেখা করুন, আমরা আমাদের চিকিৎসা কর্মীদের সহায়তায় আপনাদের সাথে চিকিৎসা সংক্রান্ত সকল বিষয় এবং প্রক্রিয়াসমূহের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করবো। কিছু ক্যান্সারের ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের পরবর্তীতে রেডিয়েশন থেরাপির প্রয়োজন হতে পারে। এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে পূর্বে বা পরে কেমোথেরাপির প্রয়োজন হতে পারে।“
দলীয় প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রত্যেক রোগীর চিকিৎসা
"রোগীর সর্বোচ্চ সুস্থতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা একে অন্যের সহযোগী হয়ে একটি বহুমাত্রিক দল হিসেবে কাজ করি। শরীরের যেই অংশেই ক্যান্সার হোক না কেন, আমাদের বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা সেটির চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। আমাদের রেডিওলজিস্টরা এক্সরে নিরক্ষন ও নির্ভুল চিকিৎসার ব্যাপারে যথেষ্ট দক্ষ এবং অভিজ্ঞ।" ডাঃ নারংসাক ডাক্তারি দলের অভিজ্ঞতা বিষয়ে এই কথা বলেন। "চিকিৎসার ক্ষেত্রে দূরত্ব কোনো বাঁধাই নয়। উদাহরণস্বরূপ, জেনেটিক মিউটেশনের পরীক্ষার জন্য নমুনা বিদেশে প্রেরণের প্রয়োজন হলে সেক্ষেত্রে টেলি কনফারেন্সের মাধ্যমে বিদেশি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের যুক্ত করে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা বিষয়ক বিষদ আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়। আমরা নিয়মিতভাবেই এমনটা করে থাকি। আপাতদৃষ্টিতে তা উপকারী মনে না হলেও এর মাধ্যমে আমরা রোগীকে ক্যান্সারের সঠিক চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চিকিৎসা খরচ থেকে বাঁচাতে পারি।"
হরাইজোন ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসার ঊর্ধ্বেও অনেক কিছু রয়েছে
আঞ্চলিক ক্যান্সার সেন্টারের কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত কথা বলার সময় ডাঃ নারংসাক উল্লেখ করলেন যে, “খোলা বাজার থেকেই চিকিৎসার উন্নতমানের অত্যাধুনিক সকল যন্ত্রপাতি কিনতে পাওয়া যায়। সেই দিক থেকে আমরা পুরোপুরিভাবেই প্রস্তুত। মূল্যবান সরঞ্জাম সংগ্রহের থেকেও যে বিষয়টি সবচেয়ে কঠিন ছিল তা হল অত্যন্ত পেশাদার ও অভিজ্ঞ চিকিৎসাকর্মীদের একত্রিত করা, যা আমরা সফলভাবে করতে পেরেছি। প্রতিটি রোগীর জন্য আমাদের দশ বা ততোধিক সদস্য বিশিষ্ট কমিটি রয়েছে,"
“চিকিৎসার সাফল্যের জন্য রোগীর মনোবল অত্যন্ত জরুরি। ক্যান্সার সেন্টারে রোগীকে সর্বদা তার ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট, চিকিৎসা পদ্ধতি এবং সম্পূর্ণ ভালো হবার সম্ভাবনা কতটুকু এই সকল বিষয়ে অবহিত করা হয়ে থাকে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে রোগী এসব তথ্য সহ্য করার মতন অবস্থায় থাকেন না, সেসব ক্ষেত্রে রোগীর আত্নীয়-স্বজনকে বিস্তারিতভাবে অবহিত করা হয়। পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় সেসব ক্ষেত্রে আমরা রোগীর মনোবল যাতে নষ্ট না হয় তেমনভাবেই তাদের কাছে তথ্য উপস্থাপন করি।" রোগীর মনোবল রক্ষার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ডাঃ নারংসাক এসব কথা বলেন।
“প্রাচ্য থেকে আসা রোগীদের রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা পদ্ধতি মেনে নিতে বেশি অসুবিধা হয়। তাদেরকে এই বিষয়ে অবহিত করতে আমাদেরকে প্রায়ই বিকল্প পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। ক্যান্সারের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে আমাদের কাছে আসা এমন অনেক রোগী আছেন যারা জানতেও চাননা যে তাদের হাতে আনুমানিক আর কতোটা সময় আছে। অন্যদিকে পশ্চিমা থেকে আসা রোগীরা বেশিরভাগই ক্যান্সারের মতন জটিল রোগ হওয়ার কঠিন সত্যকে সহজভাবে গ্রহণ করেন, বরং চিকিৎসার বিষয়ে তাদের খোলাসা করে না জানালে তারা আমাদের চিকিৎসার ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলেন।"
ডাঃ নারংসাক ভেষজ ওষুধের বিষয়ে তার উদ্বেগও প্রকাশ করেন। তিনি বলেন অনেক রোগী আছেন যারা তাদের চিকিৎসার পাশাপাশি ভেষজ ওষুধও সেবন করে থাকেন এটা না জেনেই যে তা তাদের নিয়মিত চিকিৎসায় তা বাধা সৃষ্টি করছে। "এই সকল ভেষজ ওষুধের মধ্যে কোনো কোনটির ক্যান্সার নিরাময়ের ক্ষমতার কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। কখনও কখনও রোগী চুপিসারে এই ধরণের ওষুধ সেবন করে থাকেন যার ফলে অবস্থা আরও বেশি খারাপের দিকে চলে যায়। আমরা রোগীদের যেসব ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেই তার সবই সফল বৈজ্ঞানিক গবেষণার দ্বারা সমর্থিত, তাই আমি রোগীদের বিশেষভাবে পরামর্শ দিই যাতে তারা আমাদের নির্দেশনা অনুযায়ী দেওয়া ওষুধেই স্থির থাকেন।"
বিরল ক্যান্সার মোকাবিলায় প্রস্তুত
“নিরাময়যোগ্য সবচেয়ে কঠিন ধরনের ক্যান্সারকে আমরা "বিরল ক্যান্সার" বলে থাকি। প্রতি দশ লাখ রোগীর মধ্যে একজনের মধ্যে এই ধরনের ক্যান্সার দেখতে পাওয়া যায়। শরীরের যেকোনো অংশে এই ক্যান্সার হতে পারে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সে অনুযায়ী কোনো গবেষণা বা চিকিৎসা আমাদের কাছে থাকে না। আমাদের নিজস্ব গবেষকদল এই সংক্রান্ত বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা পরিচালনা করে যাচ্ছেন, এছাড়াও এই ধরনের ক্যান্সারের মুখোমুখি হলে আমাদের নিজস্ব অভিজ্ঞ ও দক্ষ চিকিৎসকবৃন্দ রয়েছেন, যারা সফল চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন” ।
ডক্টর নারংসাক আস্থার সাথে বললেন যে, “আঞ্চলিক ক্যান্সার সেন্টারে আসা প্রতিটি রোগীই ইতোমধ্যে অগণিত ব্যথা আর ভোগান্তির মধ্য দিয়ে গিয়েছেন। আমরা তাদের জন্য আশার আলো দেখাতে চাই এবং আঁকড়ে ধরার মতন আশ্রয় হতে চাই। তাদের সুস্থ সুন্দর জীবন ফিরিয়ে দিতে আমরা তাদের নিবিড় পরিচর্যা দেয়ার ইচ্ছা রাখি। তাদের সুস্থ করে তুলে এমন একটি জীবনে ফিরিয়ে দিতে চাই যেন সেটি তারা সম্পূর্ণভাবে উপভোগ করতে পারে এবং এটিই আমাদের সৎ উদ্দেশ্য,"
For more information please contact:
Last modify: October 30, 2020