এমন কিছু যদি থেকে থাকে যা ঙ্গুয়েন থি মান - কে যে কোনো পরিস্থিতিতে এগিয়ে নিয়ে যায়, তবে সেই একটি জিনিস হলো সংগীত। তেপ্পান্ন বছর বয়সী ভিয়েতনামের এই রিয়েলটর (রিয়েল এস্টেট প্রফেশনাল) যখনই মঞ্চে ওঠেন তখন তিনি না হেসে পারেন না, তখনও না যখন ফুসফুসের ক্যান্সার তার সেই সকল সুখ কেড়ে নিতে চাচ্ছে।
তার ক্যান্সারকে প্রতিহত করবার দৃঢ় সঙ্কল্প গল্পটির সূচনা হয় যখন সে প্রথম তার শরীরে অস্বাভাবিক কিছু খেয়াল করেন। তিনি হো ছি মীনঃ শহরের একটি হাসপাতালে যান: "আমার শরীর ভালো লাগছিলোনা, আমার তীব্র জ্বর ছিল কিন্তু আমার শরীর শীতে কাঁপছিলো, যার জন্য আমি একজন চিকিৎসকের দ্বারস্থ হই এবং জানতে পারি যে আমার হেপাটাইটিস হয়েছে। প্রায় একমাসেরও বেশি এবং দুই শতাধিক শিশির অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পরও, আমার চিকিৎসার কোনো উন্নতি হচ্ছিলোনা; আমি ভেবাচেকা খেয়ে গেলাম। তারপর, আমার এক বন্ধু যে পূর্বে বাম্রুংরাদ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন, তিনি আমাকে এটি খুবই ভালো একটি হাসপাতাল বলে এখানে চিকিৎসার জন্য পরামর্শ দিলেন, যার জন্য আমি আরো কিছু অনুসন্ধান চালালাম এবং বাম্রুংরাদ হাসপাতালের ভাইটাললাইফ সাইন্টিফিক ওয়েলনেস সেন্টারের খোঁজ পেলাম। আমি সেখানকার কিলেশন থেরাপি(Chelation Therapy) ও ডিটক্সিফিকেশন(Detoxification) সম্পর্কে জানতে পারি, এবং আমি অনুভব করি যে আমার শরীরের ঠিক এই জিনিসটিই দরকার, এবং দেরি না করে আমি তৎক্ষণাৎ ঐ প্রোগ্রামে তালিকাভুক্ত হই।
তাঁর সুখের ওপর ঝোড়ো মেঘ বাসা বাঁধছে
থি মান বাম্রুংরাদ সম্পর্কে তাঁর প্রাথমিক মনোভব জানালেন: "এখানে আসবার আগে, আমি শুধু মাত্র সিঙ্গাপুরের হাসপাতালগুলো সম্পর্কে জানতাম। আমি কখনো কল্পনাও করিনি থাইল্যান্ডে এই স্তরের কোনো হাসপাতাল থাকবে, তবে বামরুনগ্রাদ হাসপাতালের কিলাশন থেরাপি পাবার পর, আমি একেবারেই অভিভূত হয়ে যাই। এর প্রতিটি বিষয়ই অসাধারণ ছিল, সেবা-শুশ্রুষা থেকে শুরু করে আমি যে চিকিৎসা পেয়েছি সবকিছুই।" তাঁর বাম্রুংরাদের প্রথম অভিজ্ঞতার পর প্রায় এক বছর হতে চলছিল যখন তিনি আবারো তাঁর শরীরে কিছু অস্বাভাবিক বিষয় খেয়াল করতে লাগলেন। এবারে তিনি বিন্দু মাত্র কালক্ষেপন না করে বাম্রুংরাদের পথে পাড়ি জমান।
"প্রথমে সবকিছুই বেশ স্বাভাবিকই লাগছিলো, কিন্তু এরপর আমার পিঠে ব্যথা অনুভব করতে থাকি, আমার কাঁধ থেকে পিঠের মধ্যভাগ পর্যন্ত। আগের চাইতে অনেক বেশি ঘেমে যেতে লাগলাম, এবং আমার শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চাইতে বেশি থাকতে লাগলো। আমার বাম্রুংরাদের ডাক্তার কনট্রাস্ট মিডিয়াসহ
সিটি স্ক্যান করতে বললেন, যেখানে একধরণের বিশেষ ধরণের রং (dye) আমার শরীরে ইনজেকশন আকারে দেয়া হবে। অবশেষে আমার পেট (PET) স্ক্যান হলো যাতে আমার ফুসফুসে বিভিন্ন আকৃতির বেশ কিছু ক্যান্সার আক্রান্ত টিউমার পাওয়া গেল।
থাইল্যান্ডের প্রথম পেট(PET)/সিটি(CT) (পজিট্রন এমিশন টোমোগ্রাফি/কম্পিউটেড টোমোগ্রাফি) মেশিন হল হরাইজন ক্যান্সার সেন্টারের। থি মানের ফুসফুসের ক্যান্সার মাত্রা এবং যথার্থতা সঠিক ও বিস্তারিতভাবে নির্ধারণ করতে এই মেশিনগুলো আমাদের সহায়তা করেছে। যখন আমি প্রথম ক্যান্সারের কথা জানতে পারি তখন আমি ভয় পেয়ে যাই ও দুশ্চিন্তায় পরে যাই। আমি এমনটাও শুনতে পাই যে টিউমারকে যদি যেকোনো দিক থেকেই বেশি বিক্ষুব্ধ করা হয় তবে এটি তৎক্ষণাৎ আমার সারা শরীরে ছড়িয়ে যেতে পারে, যার ফলে আমি যেকোনো সিদ্ধান্ত তাড়াহুড়া করে নেয়া থেকে বিরত থাকি।" কিন্তু তাঁর রোগনির্ণয়ের পরে যে অস্বস্তির সৃষ্টি হয় তা ম্লান হয়ে যায় যখন সে খবর পায় যে তাঁর মা, যিনি ভিয়েতনামে ফুসফুসের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়ে চলছিলেন, ঠিক যেদিন থি মানের রোগ ধরা পড়ে, ঠিক একই দিনে তাঁর মা ঐ একই রোগে মারা যান।
"এটি একটি শোচনীয় খবর ছিল। আমি আমার মায়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য ভিয়েতনামে সেই একই দিনে ফিরে যাই। এটি শেষ হওয়া মাত্র আমি হরাইজন রিজিওনাল ক্যান্সার সেন্টারে আমার নিজের চিকিৎসার জন্য ফিরে আসি। আমি ঠিক আমার মায়ের মতোই নিজেও ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে নিঃশ্বেষ হয়ে যেতে চাইনি, আমার নিজের একটি পরিবার রয়েছে যারা আমার ওপর নির্ভরশীল। এবং আরেকটি বিষয় যা আমি একেবারেই হারাতে চাইনা তা ছিল আমার গান গাওয়ার ক্ষমতা, কারণ আমার সত্যিকারের ভালোবাসা ছিল গান গাওয়া। এমনকি আমি গান গাওয়ার প্রতিযোগিতায় পুরস্কারও লাভ করেছি। আমি যখনই মঞ্চে গান গাইতে উঠি তা আমার অন্তরে অবিরাম আনন্দের সঞ্চার করে এবং একই সাথে আমার বন্ধুদের সাথে আমি ভালো সময় কাটাতে সহায়তা করে," থি মান অপলক দৃষ্টিতে বলে গেলেন।
আমার চিকিৎসা বেশ সুষমভাবেই চলছিল। আমি সর্বদা মনোবল স্থির রেখেছি। আমি আসলেই সুস্থ হতে চেয়েছি, যে জন্য আমার অনকোলজিস্ট (ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ), ড. তানাওয়াৎ চিরাকুলাপোর্ন, যিনি আমার ওষুধের বিষয়টি দেখছিলেন এবং ড. পাত্তানাসাক লার্তপ্রাদিত, কার্ডিওথ্রোয়াটিক সার্জন যিনি আমার অপারেশন করেছেন, দুজনই যা-ই বলেছেন,আমি তা মেনে চলেছি।" থি মান বললেন। "আমার ডাক্তাররা আমার চিকিৎসা চলাকালীন প্রকৃতই আমার যত্ন নিয়েছেন, এমনকি তারা নিজেদেরকে আমার সুষ্ঠু চিকিৎসার নিমিত্তে নিবিষ্টভাবে আমার রক্তচাপ পরীক্ষার পাশাপাশি আমার শরীর যাতে ওষুধ গ্রহণের জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে ওঠে সেভাবে আমার শরীরকে প্রস্তুত করে তুলছিলেন। সিসিইউ রুমের যারা নার্স ছিলেন, তারাও অত্যন্ত যত্নবান ছিলেন, তারা সবসময় হাসোজ্জল মুখে আমার মনে সাহস জোগাচ্ছিলেন। ভাষাগত সীমাবদ্ধতার কথা যদি আসে, তা বিন্দুমাত্র ছিলোনা। একজন ভিয়েতনামি মেডিকেল দোভাষী (ইন্টারপ্রেটার) সার্বক্ষণিক উপস্থিত ছিলেন, যেটি আরো বেশি স্বস্তির সঞ্চার করেছিল," থি মান তাঁর চিকিৎসার কথা বলে গেলেন, দুই সপ্তাহের মাঝে তার অন্তত চারটি অপারেশন সংঘটিত হয়।
যত দ্রুত আপনি জানবেন, তত নির্বিকল্পরূপে আরোগ্য লাভ করবেন
"আমি খুব সৌভাগ্যবান যে আমি আমার ফুসফুসের ক্যান্সার সম্পর্কে একেবারে প্রাথমিক পর্যায়েই জানতে পারি, যার ফলে আমার কোনো কেমোথেরাপি, বা রেডিয়েশন থেরাপির প্রয়োজন হয়নি। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা শুরুর অর্থ দাঁড়িয়েছে যে আমি আমার জীবনের প্রসন্নতার অধ্যায়ে শীঘ্রই ফিরে যেতে পারবো। আমি আসলেই হরাইজন রিজিওনাল ক্যান্সার সেন্টারের সকলকে ধন্যবাদ জানাই।" সাক্ষাৎকার চলাকালীন সময়, থি মান এর এক সপ্তাহ পরই তাঁর পরবর্তী সংগীত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তিনি ক্যান্সার মুক্ত ঘোষিত হবার পর, তাঁর আনন্দের অতিশায্যের সঞ্চালনের জন্য।
ক্যান্সার থেকে শিক্ষণীয়
যা যা হয়েছে তা আমার স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হবার ব্যাপারে আমাকে মনোযোগ ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করেছে এবং তাঁর চাইতেও জরুরি যা তা হল আমার পাশাপাশি আমার পরিবারের ব্যাপারেও আমাকে সাবধান করেছে। আমি সর্বদা সচেতন থাকি যাতে আমার বাসা সর্বদা আগেকার চাইতে অনেক বেশি পরিষ্কার থাকে, আমার খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারেও আমি অত্যাধিক সচেতনতা বজায় রাখি, আমি আমার খাবার পানি পরিশোধন করি, এবং এখন আমার ঘরে আমি এয়ার ফিল্টার ব্যবহার করি। আমি রেড মিট খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি এবং গ্রিল করা খাবারও বন্ধ করেছি। চর্বিযুক্ত খাবারও বাদ দিয়েছি। যদি আমাকে গ্রিল এবং সংগীতসাধনার মাঝে বেঁচে নিতে বলা হয়, বিনাবাক্যে সংগীত জয়ী হবে। সংগীত সাধনা বন্ধের বহু আগেই আমি বারবিকিউ ছেড়ে দেব, কারণ এর মাঝেই আমার প্রকৃত শান্তি-স্বস্তি-স্বাচ্ছন্দ বিরাজমান।" থি মান হাসোজ্জল মুখে তাঁর বক্তব্য শেষ করলেন।
For more information please contact:
Last modify: October 29, 2020