"আমি কখনো আমার কোনো রোগীকে সেবা প্রদানে অক্ষম এমনটা ভাবিনা।" বলছিলেন ড. পিয়াওয়ান কেনসাকু, একজন জেনারেল সার্জন, হরাইজন রিজিওনাল ক্যান্সার সেন্টার, বামরুনগ্রাদ হাসপাতালের।" এটা শুধু এমন যে প্রতিটি রোগীর সমস্যাগুলো অনন্য হয়ে থাকে, এবং আমাদের কাজ হলো তাদের স্বার্থে আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা দ্বারা সার্জারিটিকে সম্পাদন করা, কারণ আমরা তাদের সবচাইতে ভালো মানের চিকিৎসা প্রদান করতে চাই, যাতে করে তারা তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় স্বাচ্ছন্দে ফিরে যেতে পারেন।"
ক্যান্সারের চিকিৎসায় একজন সার্জনের ভূমিকা অত্যাবশ্যক, তবে প্রতিটি রোগীকেই সার্জনের আওতাধীন হতে হবে এমনটা নয়। ক্যান্সারের চিকিৎসা বিভিন্ন আকারের এবং গঠনের হয়ে থাকে; কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপি, সার্জারি, অথবা এদের রোগীর সর্বোৎকৃষ্ট চিকিৎসার প্রয়োজনে উক্ত যেকোনোটির সংমিশ্রনে চিকিৎসা প্রদান করা হয়ে থাকে।
সার্জনের হাতে এসে পৌঁছাবার পূর্বে, একজন রোগীকে বিভিন্ন ধাপ ও প্রক্রিয়া পেরিয়ে আসতে হয়, ডিজিটাল ম্যামোগ্রাম ইমাজিং, আল্ট্রাসাউন্ড, এবং কারো কারো ক্ষেত্রে বায়োপসিও হয়ে থাকে। আমাদের অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ভিন্ন রোগীর বিশদ বিবরণীগুলো সূক্ষরূপে বিবেচনায় রাখতে হয়, কারণ ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী এবং ক্যান্সার বিহীন রোগীদের সার্জারির বিবরণী ও প্রস্তাবনা অনেকটাই ভিন্ন হয়ে থাকে," ড. পিয়াওয়ান ব্যাখ্যা করছিলেন। "উদাহরণস্বরূপ, ধরুন মেটাস্টাটিক ক্যান্সার (যখন ক্যান্সার প্রাথমিক উৎপত্তিস্থল হতে অন্য কোথাও ছড়িয়ে পরে) এর রোগীদের কথাই। তৎক্ষণাৎ অপারেশন করাটা হয়তো অনুপযোগী হবে। তাদের হয়তো প্রাথমিকভাবে কেমোথেরাপির কোর্স নিতে হবে, এবং তাদের শরীর যদি এতে এবং ক্যান্সার ছড়িয়ে যাওয়া রোধে ইতিবাচক সাড়া দেয়, তখন সার্জারি হয়তো একটি বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হবে। রোগীর জন্য চূড়ান্ত হিতকর কোনটি তা সম্পাদনই আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য।"
সিদ্ধান্তগ্রহণ এবং চিকিৎসার কোন প্রক্রিয়াটি অগ্রাধিকার পাবে তা হরাইজন রিজিওনাল ক্যান্সার সেন্টারের ভিন্ন বিশেষজ্ঞদের টীম ও রোগীর সমন্বয়ে সমঝোতার মাধ্যমে নির্ধারিত হয়ে থাকে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় রোগীর জন্য হিতকর কোনটি তা আমাদের মুখ্য বিবেচনায় থাকে। আমরা প্রকৃত অবস্থার একটি বাস্তব চিত্র সামনে তুলে ধরি এবং পরামর্শ করি, যাতে করে রোগী তথ্য-উপাত্ত সহকারে তার জন্য কি কি বিকল্প রয়েছে তা দেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারে," ড. পিয়াওয়ান বলে যাচ্ছিলেন। তবে যদি কোনো বিশেষত জটিল বা বিরল সমস্যা পেয়ে থাকি তবে আমরা সেটা আলোচনার জন্য টিউমার বোর্ডের সম্মেলনে উপস্থাপন করি যাতে বিবিধ চিকিৎসক ও চিকিৎসাবিষয়ক পেশাদাররা এ সম্পর্কে আরো বিশদ জ্ঞানদান করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে, যেমন মেলানোমাসহ ত্বকের ক্যান্সার, অথবা লিভার ক্যান্সার- যা ইতোমধ্যেই যে শারীরিক গঠনতন্ত্রে প্রভাব ফেলেছে তার কারণে জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে - এধরণের সমস্যাগুলো তীব্ররূপে জটিল। একারণে রোগীর সামনে গ্রহণযোগ্য উৎকৃষ্ট উপায়গুলো উপস্থাপনের পূর্বে আমাদের জন্য পেশাদারি আলোচনা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে।"
"আমি মনে করি হরাইজন রিজিওনাল ক্যান্সার সেন্টারের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো এর সার্জনদের মাঝে অগাধ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিরাজমান। তাদের যৌথ অভিজ্ঞতা রোগীকে কার্যকরীভাবে ও দক্ষতার সাথে চিকিৎসা প্রদানে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। ব্রেস্ট ক্যান্সারের কথাই ধরুন, যেটা ডাক্তার হিসেবে আমি সবচাইতে বেশি সম্মুখীন হই। অন্যান্য বেশিরভার জায়গাতেই দেখা যায় অপেরেশনের মাধ্যমে টিউমারের সাথে সাথে ব্রেস্ট অপসারণের মাদ্ধমেই চিকিৎসা সমাপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের বেলায়, আমরা আরো বিশদ তত্ত্বাবধান করে থাকি।"
ড. পিয়াওয়ান তার এ উক্তির পেছনে ব্যাখ্যা দিলেন। "আমি দৃঢ়ভাবে শরীরকে স্বাভাবিক রাখবার পক্ষপাতী, যাতে রোগী স্বাভাবিক বোধ করতে সক্ষম হন, এবং চিকিৎসা চলাকালীন যতটা সম্ভব অসুস্থ বোধ করানো থেকে বিরত রাখবার চেষ্টা করি। এটা রোগীকে তার চিকিৎসায় তার নিজেরও ভূমিকা রাখতে সহায়তা করে। একারণে ওনকো- প্লাষ্টিক সার্জন একটি বিশেষজ্ঞতা হিসেবে দেখা দিয়েছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা দিয়ে চিকিৎসার সবচাইতে ভালো ধরণগুলো খুঁজে বের করবার চেষ্টা করি যার ফলাফলস্বরূপ অপেরেশনের পরও রোগী তার ব্রেস্ট একটি নির্দিষ্ট অংশ পর্যন্ত অক্ষুন্ন রাখতে সক্ষম হন। এটি সম্পাদনের ভিন্ন ভিন্ন উপায় রয়েছে, যেমন পিঠের কিছু অংশ থেকে অথবা পেটের কিছু অংশ থেকে টিস্যু সংগ্রহ করে ব্রেস্টের আকৃতি প্রদান করা, অথবা সিলিকন ইমপ্লান্ট ব্যবহার করবার মাধ্যমে। আমরা ব্রেস্টের আকৃতি যতটা সম্ভব স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করি, যাতে করে অপেরেশনের পরও তারা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে।"
ড. পিয়াওয়ান তার পছন্দের একটি ঘটনা বর্ণনা দিলেন। "আমাদের কাছে একজন রোগী দ্বিতীয় মতামত (সেকেন্ড ওপিনিয়ন) এর জন্য এসেছিলেন। তাকে আরেকটি হাসপাতাল হতে পুরো লিম্ফনোড সহকারে অপসারণের(ব্রেস্ট) মাধ্যমে ম্যাসটেক্টোমি করবার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এটি রোগীর জন্য অবিশ্বাস্যভাবে পীড়াদায়ক বিষয় হয়ে দাঁড়ায় তার পারিবারিক ও ব্যক্তিগত জীবনের ভবিষ্যতের কথা ভেবে। আমি বুঝতে পারছিলাম যে যদি উনি ম্যাসটেক্টোমি করে ফেলতেন তবে তার মানসিক- এবং শারীরিক অবস্থা প্রখরভাবে প্রভাবিত হতো, যার জন্য আমরা একটি ভিন্ন ধরণের চিকিৎসার পদ্ধতি তার জন্য উপস্থাপন করি।
প্রতিটি রোগীর ক্যান্সার এর চিকিৎসা তাদের দেহতত্ত্বের উপর নির্ভর করে, তাই আমরা ওঁর ইমিউনোহিস্টোকেমিস্ট্রি (আইএইচসি) টেস্ট শুরু করি। এধরণের টেস্টে, ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ হতে নিঃসৃত প্রোটিনকে একধরণের রাসায়নিক ডাই ব্যবহারের মাধ্যমে পাংশু করে দেয়া হয়। প্রোটিন প্যানেল হতে আমরা যথাযথভাবে নির্ধারণ করতে পারি যে, কোন ধরণের ক্যান্সার হয়েছে, যেটা উক্ত রোগীর ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে যে এমন একটি ধরণ যা টার্গেটেড থেরাপিতে ভালোভাবে সাড়া দেবে। মেডিকেল টিম ও রোগীর সাথে পরামর্শের পর, আমরা সার্জারির পূর্বে কেমোথেরাপির কোর্স করবার সিদ্ধান্ত নেই।
যখন সার্জারির সময় আসে, আমরা তখন দেখতে পাই যে টিউমার ইতোমধ্যেই আকৃতিতে সঙ্কুচিত হয়ে ১ সে.মি. হয়ে গেছে, লিম্ফনোড তো অপসারণের প্রয়োজন হবেই না, এবং তার পুরো ব্রেস্টও স্বাভাবিক অবস্থায় ধরে রাখা সম্ভব হবে। এটাকে বলা হয়ে থাকে কমপ্লিট প্যাথোলজিক রেসপন্স। তিনি তার ব্রেস্টকে সংরক্ষণ করতে পেরেছেন এবং বাহু ফুলে যাবার মতো অসস্তিদায়ক অবস্থা হতে পরিত্রান পেয়েছেন, ধন্যবাদ জানাই আমাদের পুঙ্খানুপুঙ্খ ডায়াগনসিস ও ট্রিটমেন্ট প্রদানের অক্লান্ত প্রচেষ্টাকে।" ড. পিয়াওয়ান দীপ্তহাস্যে বলে গেলেন।
একজন সার্জনের পরামর্শ
আপনার চিকিৎসার সফলতার পেছনে আপনার শারীরিক এবং মানসিক উভয় অবস্থারই অসামান্য অবদান রয়েছে। যেসব রোগীরা ভালো মানসিকতা, ইতিবাচক মনোভব, স্বাস্থকর খাওয়া-দাওয়া ও ব্যায়াম করেন, এধরণের রোগীদের চিকিৎসা সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে," ড. পিয়াওয়ানের শেষ বক্তব্য ছিল সচেতন বিষয়ক। "কিন্তু এর সম্ভাবনা আরো বেড়ে যায়, সমস্যার প্রাথমিক পর্যায়েই তা নির্ধারণ করা গেলে, অথবা ক্যান্সার যদি এর প্রাথমিক পর্যায়েই ধরা পড়ে, যা ক্যান্সার চূড়ান্তভাবে নির্মূল করবার সম্ভাবনা আরো বেশি বাড়িয়ে দেবে, যার কারণে আমি বাৎসরিক চেক-আপের পরামর্শ সবাইকে দিয়ে থাকি।
For more information please contact:
Last modify: October 21, 2020