“আমরা জানি রোগীর জন্য অপেক্ষারত থাকাটি একটি স্পর্শকাতর বিষয়। রোগীদের যদি দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষারত থাকতে হয়, তারা হয়তো উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন, অথবা তাদের উপযুক্ত সেবা প্রদান করা হচ্ছেনা এমনটা ভাবতে পারেন। একারণেই অপেক্ষার সময় নিয়ে বিশ্লেষণ এবং সে অনুসারে পরিচালনা করা আমাদের কাছে অন্যতম অগ্রাধিকার রাখে।" কথাগুলো বলছিলেন পানিতা সুভান্নাপাফ, হরাইজন রিজিওনাল ক্যান্সার সেন্টারের একজন পেশেন্ট ন্যাভিগেটর।
হরাইজন রিজিওনাল ক্যান্সার সেন্টারের প্রতিটি রোগীর আরোগ্য লাভের গল্পটি শুরু হয় পানিতার সাথে সাক্ষাতের মাধ্যমে, যার প্রধান কাজ রোগীকে স্বাগত জানানো ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা। " আমার কার্যসীমার মাঝে হরাইজন রিজিওনাল ক্যান্সার সেন্টারের প্রবেশদ্বার হতে আগত প্রতিটি রোগী জড়িত। প্রথম ভালো লাগাটা খুবই জরুরি, কারণ আমরা যে শুধু রোগীর ব্যাবহারিক চাহিদাই পূরণ করি তা নয়, এর পাশাপাশি তাদের মানসিক চাহিদার কোথাও বিবেচনায় রাখতে হয়। বিশ্বাস ফলপ্রসূ চিকিৎসার জন্য অত্যাবশ্যক, যার জন্য একেবারে শুরু থেকেই আমরা রোগীকে স্বাচ্ছন্য বোধ করানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাই। তাদের যা-ই প্রয়োজন, আমরা সে ব্যাপারে তাদের যাতে হতাশার উদ্রেক না করে তা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করি।"
কাজটি সাধারণ তবে দায়িত্বটি অসাধারণ
আমাদের প্রায়শই এমন কিছু রোগী থাকেন যাদের বিশেষ ধরণের সমস্যা থেকে থাকে যাদের অতিরিক্ত সেবা ও সুযোগ প্রয়োজন হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, যারা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকতে পারেন না, অথবা যাদের অপেক্ষারত অবস্থায় অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে উঠবার অভ্যাস থাকে," পানিতা বলতে থাকলেন। " আমি এধরণের রোগীদের চেহারা বিশেষভাবে মনে রাখবার চেষ্টা করি-- যদিও আমি এমনি সময়ও যারাই আসেন তাদের প্রত্যেককে মনে রাখবার চেষ্টা করি-- যাতে করে আমি মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেই এবং কিভাবে তাদের প্রয়োজনগুলো পূরণ করা সম্ভব তা সম্পর্কে একটি পূর্ব ধারণা রাখবার চেষ্টা বহাল রাখি।"
"প্রতিদিন কাজের পর, আমি পরদিন যেসব রোগীর আসবার তালিকা রয়েছে তা পর্যালোচনা করি; তারা কোন ধরণের রোগী, তাদের পছন্দ-অপছন্দ, অথবা কোনো বিশেষ প্রয়োজন আছে কি না। এটা কি কখনো কখনো আমার জন্য ক্লান্তিদায়ক বা হতাশাদায়ক? অবশ্যই হ্যা। তবে আমি ওই মুহূর্তগুলো যত দ্রুতসম্ভব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলবার চেষ্টা করি, কারণ আমি প্রতিটি রোগীকেই আমার একশো শতাংশই দেয়ায় গর্ব বোধ করি এবং নিশ্চিত করি যে তারা সবাই যেন সমানভাবে মনোযোগ পায়। একই সময় একই সাথে বেশ কিছু জিনিস সামাল দিতে হয়, হতে পারে তা রোগী সম্পর্কিত কিছু, অথবা তাদের পরিবারের কোনো চাহিদা, অথবা যাই হোক।" পানিতার অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হলো তার সকল রোগীকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা, এবং প্রতিটি রোগীর সমস্যাকে প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করা। পানিতা সমস্যা হবার আগেই তা অনুমান করে ফেলেন, যেমন ভিন্ন ডাক্তারের প্রায় একই সময়ে অ্যাপয়েন্টমেন্ট এর কারণে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়, এবং সব সময়ই রোগীর ভালো অভিজ্ঞতা লাভের উদ্দেশ্যে সে কোননা কোনো সমাধান প্রস্তুত করে রাখে।
মনোবল জোগানোর সময়ের ব্যাবস্থাপনা
"আমি প্রায়ই খেয়াল করেছি দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা রোগীর জন্য অত্যধিক পরিমানে দুশ্চিন্তা এবং উদ্বিগ্নের সঞ্চারণ করে, যাতে করে চিকিৎসার অভিজ্ঞতা যতটা মসৃনভাবে হওয়া উচিত সেভাবে হতে পারেনা। এধরণের পরিস্থিতি সামাল দেবার কিছু উপায় আছে। যেমন, যেসব রোগীর ইতোমধ্যেই রক্ত পরীক্ষা হয়ে গেছে, আমি তাদের যোগাযোগের নম্বরটি রেখে দেই, যাতে করে ফলাফল আসবার আগ পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করবার বদলে তাদের আর কিছু করবার থাকলে তা করে আসতে পারে, এবং ফলাফল চলে আসবার আগেই তাদের কল করে জানিয়ে দেই কখন আবার সেন্টারে উপস্থিত হতে হবে।
যদি একজন অনকোলজিস্ট রোগী আসবার পূর্বেই তার ব্লাড টেস্টের রেজাল্ট ইতোমধ্যেই পর্যালোচনা করে বলেন যে, রোগী কেমোথেরাপি শুরু করবার জন্য সক্ষম, তাহলে আমি রোগীকে ডাক্তার দেখানো ছাড়াই সরাসরি কেমোথেরাপি রুমে নিয়ে যেতে পারি। এটা যে শুধু রোগীকে অপেক্ষা করে সময় নষ্ট করা থেকেই বাঁচিয়ে দেয় তাই না, একই সাথে এটা তাদের জন্য সুবিধাজনকও হয়। এটা একই সাথে আমরা তাদের জন্য যা করছি তাতে তাদের মনে বিশ্বাস ও আত্মবিশ্বাসও তৈরী করে, হোক না সেটা তাদের চিকিৎসার খুবই নূন্যতম একটি বিষয়।
প্রতিদিন প্রায় আশিরও অধিক রোগী তাদের সেন্টারে আগমন করছে, পেশেন্ট ন্যাভিগেটর টিমের যার ফলে ভিন্ন ধরণের পরিস্থিতি সামাল দিয়ে যেতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এর জন্য প্রয়োজন পেশাদারি দক্ষতা, যেমন নতুন যেকোনো তথ্য দ্রুত উপলব্ধি করা, এবং এতে বিশদভাবে মনোযোগ দেয়া। "ঠিক যে মুহূর্তে আমি এই পদে অধিষ্ঠিত হয়েছি, আমি আমার নিজেকে বলেছি যে আমাকে আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করে যেতে হবে। আমি জানতাম যে আমাকে নতুন নতুন দক্ষতা জানতে হবে এবং আমার আরো বেশি আমার জ্ঞানের ও অভিজ্ঞতার বিস্তার ঘটাতে হবে। প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর আমি মেডিকেল শব্দগুলোর পরিভাষা সম্পর্কিত নতুন নতুন কোর্স করি যাতে করে আমি রোগী এবং ডাক্তারদের আরো ভালোভাবে বুঝতে পারি। আমি প্রতিনিয়ত ভিন্নধরনের ক্যান্সার সম্পর্কিত কর্মশালাগুলোতেও যোগদান করি যাতে করে আমি রোগীদের এবং তারা যেধরনের রোগের দ্বারা আক্রান্ত তা সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা লাভ করতে পারি।"
"আমি মনে করি রোগীকে বুঝবার জন্য একজন ভালো শ্রোতা হওয়া খুব জরুরি, যাতে করে আমি তাদের উপকারে আসতে পারি। যদিও আমার কখনো কখনো ওভারটাইম কাজ করা লাগে, অথবা গভীর রাতে রোগী কল করলে কথা বলতে হয়, তবুও আমি খুশি মনেই তাদের সহযোগিতা করে যেতে চাই এই ভেবে যে, যদি এতে তাদের মনে স্বস্তি দেয়। আমার নূন্যতম সহযোগিতা যদি তাদের স্বাচ্ছন্দ দান করে তবে সেটাই আমার পাথেয়," পানিতা দীপ্তহাস্যে বললেন।
For more information please contact:
Last modify: January 12, 2021