bih.button.backtotop.text

ক্যান্সার নিয়ে ভাবনা: ইতিবাচক চিন্তা-ধারার মাধ্যমে আপনি মুক্তি পেতে পারেন

November 22, 2019

ঘুমিয়ে যাওয়া এবং আর কখনোই সজাগ না হওয়ার ভয়। আপনার সবথেকে মূল্যবান স্মৃতিগুলো হারিয়ে ফেলা, এমনকি আপনার ভালোবাসার মানুষগুলোর কথাও মনে না পরা। প্রাণঘাতী ব্যাধির সাথে লড়াই করা। প্রত্যেক মানুষের জীবনেই এমন একটি সময় আসবে যখন তাকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে যে, সে ভয়ের কাছে হার মেনে নিবে নাকি তার সর্বশক্তি দিয়ে সেই ভয়কে জয় করার জন্য লড়াই করবে।

অসুস্থতার কাছে আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানানোর বিষয়টিই Nguyen Thi Kieu Vuong নামের ভিয়েতনামের একজন অল্প বয়সী আইনজীবীকে বামরুনগ্রাদ ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালের হরাইজোন রিজিওনাল ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসা গ্রহণ করতে আসার জন্য অনুপ্রাণিত করে

তার গল্পের শুরু 2014 সাল থেকে। সেসময় ডাক্তাররা অনুমান করেন যে তিনি ব্রেস্ট ক্যান্সারে (স্তন ক্যান্সার) আক্রান্ত। তিনি বলেন যে, “প্রথম দিকে আমি আমার বুকে হালকা ব্যথা অনুভব করতাম, ফলে ডাক্তার দেখাই। তারা কিছু টিস্যু স্যাম্পল নেয়, এবং পরবর্তীতে দেখা যায় যে আমি লিম্ফোমায় (হোয়াইট ব্লাড সেল বা শ্বেত রক্ত কণিকাতে সৃষ্ট এক ধরণের ব্লাড ক্যান্সার) আক্রান্ত। আমি খুবই শোকাগ্রস্থ হয়ে পরলাম; আমি আসলেই কিছু বুঝতে পারছিলাম না যে আমার সেই মুহূর্তে কি করা উচিৎ ছিল”।

হো চি মিন শহরের একটি হাসপাতালে আমি চিকিৎসা গ্রহণ করি এবং সেখানে আটটি ধাপে কেমোথেরাপি সম্পন্ন করি। আমার টিউমারটি চলে যায়, কিন্তু কিছুদিন পরই আমি আবার দুর্বলতা অনুভব করতে শুরু করি এবং প্রচণ্ড মাথা ব্যথাও শুরু হয়। আমি পুনরায় ডাক্তারের কাছে যাই এবং দেখা যায় যে আমার ক্যান্সার ফিরে এসেছে। আমার লিম্ফ নোডের ক্যান্সারটি আমার মস্তিষ্ক পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে। আমি খুব উদ্বিগ্ন ছিলাম এবং প্রচণ্ড মানসিক চাপে ভুগছিলাম”।
 

হরাইজোন রিজিওনাল ক্যান্সার সেন্টারের মাধ্যমে একটি নতুন সূচনা

Ms. Vuong-এর তার অসুস্থতা নিয়ে উদ্বেগ এবং এর ফলাফল সম্পর্কিত সকল জটিলতা বিষয়ে তার সচেতনতার কারণেই তিনি শারীরিক এবং মানসিকভাবে নানান ধরণের চিকিৎসার ব্যাপারে খোঁজ করার জন্য অনুপ্রাণিত হন।
 
“কোথায় চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিৎ সেই বিষয়টি নিয়ে আমি খুবই চিন্তিত ছিলাম। আমি জানতাম যে, ভিয়েতনামের সবথেকে ভালো অনকোলজিস্ট (টিউমার বিশেষজ্ঞ) দেখাতে হলে আমাকে অনেক সময় অপেক্ষা করতে হবে। আমি শঙ্কিত ছিলাম যে আমি হয়তো ততোদিন পর্যন্ত নাও বেঁচে থাকতে পারি। ঠিক সেসময়ই আমার একজন ক্যান্সার-জয়ী ব্যক্তির সাথে কথা হয় এবং তিনি তার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। আমার বেশ কিছু বন্ধু-বান্ধবও এই বিষয়ে অনেক কিছুই জানতো। তারা সকলেই আমাকে পরামর্শ দিল যে আমার থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিৎ।
 
প্রকৃতপক্ষে আমার অন্য আরো কয়েকটি স্থানে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল, যার মধ্যে রয়েছে- দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র। পরিশেষে, আমি বামরুনগ্রাদ বাছাই করি, কারণ আমি আগেও থাইল্যান্ডে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলাম এবং সেই ভ্রমণটি আমার জন্য খুবই আনন্দদায়ক ছিল। ব্যাংকক এখান থেকে মাত্র দুই-ঘণ্টার বিমান যাত্রা,
এবং ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রেও বামরুনগ্রাদের উল্লেখযোগ্য সুনাম রয়েছে। অন্যান্য বিকল্প স্থানগুলোর তুলনায় এখানে চিকিৎসা ব্যয়ও অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক ছিল একারণেই আমি থাইল্যান্ডে আসার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি”।
 

আন্তরিকতার সাথে নিরাময়

 তার মস্তিষ্ক পর্যন্ত বিস্তারিত ক্যান্সারের চিকিৎসা করার সময় এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল যেটি তার মধ্যে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার মতো শক্তি যোগায়।
 
তিনি যখন আগের মুহূর্তগুলোর কথা ভাবছিলেন তখন তার মধ্যে ভয় এবং উদ্বেগ কাজ করছিলো এবং তিনি আরও বললেন যে, “আমি প্রথম যখন এখানে চিকিৎসা গ্রহণ করতে আসি তখন ডাক্তাররা আমাকে কেমোথেরাপি দিয়ে শুরু করতে বললেন। যখন আমার শ্বেত রক্ত কণিকার পরিমাণ কমে যায়, তখন আমাকে কিছু ঔষধ দেয়া হয় যাতে করে আমি পুনরায় কেমোথেরাপির জন্য প্রস্তুত হতে পারি। সর্বমোট 12 ধাপে আমার কেমোথেরাপি সম্পন্ন হয়। কেমোথেরাপি সম্পন্ন হওয়ার পরবর্তীতে কি করতে হবে তা ডাক্তার আমাকে বললেন। আমার মস্তিষ্কের ক্যান্সার নিরাময়ের জন্য সার্জারি করা দরকার ছিল এবং এরপর আমার নিজের স্টেম সেল ব্যবহার করে স্টেম সেল থেরাপি দেয়া হবে। আমি সম্পূর্ণ বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন ছিলাম। আমি ভয় পাচ্ছিলাম যে হয়তো অপারেশনের পর আমি আর জ্ঞান ফিরে পাবো না, হয়তো আমি আমার স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলবো, এবং কাউকেই চিনতে পারবো না, এমনকি নিজের পরিবারকেও না আমি এতোটাই ভয় পাচ্ছিলাম যে আমার মনে হচ্ছিলো হয়তো আমি অপারেশন চলাকালীন সময়েই মৃত্যু বরণ করবো
 
“কিন্তু ডাক্তার স্বভাবতই তার হাসিখুশি এবং ইতিবাচক মন-মানসিকতায় ছিলেন। এছাড়াও, তিনি আমাকে আশ্বস্ত করলেন যে,
 
আমি এতোটাই সতেজভাবে জ্ঞান ফিরে পাবো যে মনে হবে আমাকে একটি নতুন মাথা দেয়া হয়েছে! কথাটি হাস্যকর শোনালেও, আমি অনেকটাই আশ্বস্ত হই। কিন্তু, অপারেশনের দিন ভয় আবারো আমার উপর ভর করে। অপারেশন শুরু হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে আমার হাত বরফের মতো ঠাণ্ডা হয়ে যায় কিন্তুআপনি বিশ্বাস করবেন নাঠিক সেই মুহূর্তেই একজন নার্স এটি লক্ষ্য করেন এবং তার দুহাত দিয়ে আমার হাত শক্ত করে ধরে রাখেন আমার হাতের ঠাণ্ডাভাব তৎক্ষণাৎ চলে যায় এবং আমি বিশেষ এক আন্তরিকতা  উষ্ণতা অনুভব করি যা ভাষায় বোঝানো সম্ভব না পরবর্তীতে অপারেশনটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়”।
 
 

সবথেকে উন্নত চিকিৎসাটি আমাদের কাছ থেকে আসে

 Ms. Vuong এখন ক্যান্সার থেকে মুক্ত। তবে তিনি প্রতি ছয় মাস পর পর নিয়মিত-ভাবে ফলো-আপ চেক আপ করাচ্ছেন এবং বিগত পাঁচ বছর ধরে তিনি কোনো সমস্যা ছাড়াই এই কাজটি করে যাচ্ছেন।
 
তিনি আনন্দের সাথে বললেন যে, “সুস্থ শরীরে ফিরে যেতে আমাকে সাহায্য করার জন্য আমি হরাইজোনের সকলকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমার স্মৃতিশক্তি এখনও ভালো আছে! এছাড়া আমার ডাক্তারকেও অবশ্যই ধন্যবাদ জানাতে চাই, কেননা তার সুবাদেই আমি আমার হারানো সকল আনন্দের মুহূর্তগুলো ফিরে পেয়েছি। আমার জীবনের সবথেকে ভয়ংকর মুহূর্তে সহানুভূতির সাথে আমার পাশে থাকার জন্য আমি নার্সদের প্রতিও আমার আন্তরিকতা প্রকাশ করতে চাই্‌, যদিও আমরা একে অপরের সাথে পরিচিত ছিলাম না। আমি সেখানকার কর্মীদের এসকল ছোট ছোট ব্যাপার, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদারতার কথা বলছি যা আমার মনে তাদের প্রতি একটি বিশেষ জায়গা তৈরি করে দিয়েছে। কেউ আগে কখনো এতো আন্তরিকতার সাথে আমার যত্ন নেয় নি। এছাড়াও আমি লক্ষ্য করেছি যে,

 তারা প্রত্যেকেই যথেষ্ট পেশাদার ছিলেন। এমনকি ইন্ট্রাভেনাস টিউব বা নলগুলো প্রবেশ করানোর সময়ও আমি কোনো ব্যথা অনুভব করি নি। আমাকে ভাষাগত কোনো প্রকার জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়নি, কারণ প্রতিটি ধাপেই একজন ইন্টারপ্রেটার বা দোভাষী ছিলেন, যার ফলে সত্যিই আমার মধ্যে মানসিক প্রশান্তি এসেছিল।
 
যারা ক্যান্সারে আক্রান্ত তাদের সকলের উদ্দেশ্যে আমি একটি কথা বলতে চাই, মনে রাখুন যে আপনাকে সুস্থ করে তোলার জন্য অর্ধেক প্রচেষ্টা হাসপাতাল করবে, কিন্তু বাকি অর্ধেকটা আমাদেরকেই করতে হবে। আমাদের নিজদেরকেই নিজেদের চিয়ারলিডার হতে হবে, রোগের কাছে হার মানা যাবে না, এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল আমরা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজেদের চিকিৎসা করবো না"।
For more information please contact:

Related Packages

ক্যান্সার নিয়ে ভাবনা: ইতিবাচক চিন্তা-ধারার মাধ্যমে আপনি মুক্তি পেতে পারেন
Rating score 0 of 10, based on 0 vote(s)

Related Health Blogs